দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ভারপ্রাপ্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান বলেছেন, অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে করা দুদকের মামলায় পিকে (প্রশান্ত কুমার) হালদারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। ইন্টারপোলের মাধ্যমে আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানা রেড এলার্ট সারা পৃথিবীতে জারি আছে। সেটা বাস্তবায়নের জন্য ইন্টারপোল অথোরিটির সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করেছি।
এটা বাস্তবায়নের জন্য আমরা চেষ্টা করবো। এছাড়া ভারতে পিকে হালদারের যেসব সম্পদের তথ্য আমরা পাচ্ছি- তা আরও সুনিদিষ্ট করে পাওয়ার জন্য বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটকে (বিএফআইইউ) ব্যবহার করা হবে। পাশাপাশি ভারতে অবস্থিত আমাদের দূতাবাসকেও ব্যবহার করা হবে। প্রাথমিকভাবে এটাই আমাদের পদক্ষেপ।
সোমবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে দুদকের ভারপ্রাপ্ত সচিব এসব কথা বলেন। এ সময় দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) মুহাম্মদ আরিফ সাদেক তার সঙ্গে ছিলেন।
সাঈদ মাহবুব খান বলেন, ভারতে প্রশান্ত কুমার হালদারের গ্রেফতারের খবর আমরা পেয়েছি। ভারতে বেশকিছু মামলায় তাকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে আজ (সোমবার) সকালে কমিশন বৈঠকে বসেছিলেন। এ বিষয়ে কমিশন আমাদের দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। পিকে হালদারের বিরুদ্ধে করা জ্ঞাত আয় বহির্ভুত সম্পদ অর্জনের মামলায় আদালতে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আরও ৩৪টি মানিলন্ডারিং সংক্রান্ত মামলা রয়েছে। এরমধ্যে কিছু মামলার চার্জশিট প্রস্তুত হয়েছে। আরও কিছু নতুন মামলাও করা হবে।
ভারপ্রাপ্ত সচিব বলেন, যে মামলায় চার্জশিট দেওয়া হয়েছে, সেই মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। এছাড়া ইন্টারপোলের মাধ্যমে ওই মামলায় রেড এলার্টও জারি করা হয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে ইন্টারপোল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। ইন্টারপোল অথোরিটি খুব দ্রুত আমাদের জবাব দিয়েছে। আমাদের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে তারা আমাদের জানিয়েছে যে, তারা ইতোমধ্যেই ভারতের ইন্টারপোল অথোরিটির সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। এবং তারা ওই আসামিকে যাতে দ্রুত বাংলাদেশে ফেরত আনা যায় সে বিষয়ে ভারতীয় ইন্টারপোল অথোরিটির সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। গ্রেফতারি পরোয়ানা তামিলের লক্ষ্যে তারা আসামি ফেরত দেওয়ার বিষয়ে পদক্ষেপ নিয়েছে। আমরা আশা করছি, যত দ্রুত সম্ভব তাকে দেশে ফেরানোর কার্যক্রম শুরু হবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠি লিখবো বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আইনি কাঠামোর মধ্যে থেকে তাকে যত দ্রুত সম্ভব বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনা হবে। ভারতের সঙ্গে আমাদের বন্দী বিনিময় চুক্তি রয়েছে। এছাড়া ভারতে যেসব সম্পদ থাকার খবর আমরা পাচ্ছি, এরমধ্যে কিছু কিছু তথ্য আমাদের আগেই জানা ছিল। আরও কিছু খবর আমরা পেয়েছি। সেসব তথ্যের বিস্তারিত জানার জন্য বিএফআইইউকে আমরা অনুরোধ জানাবো। যেন তারা ওইসব সম্পদের বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করে আমাদের সরবরাহ করে।
পাশাপাশি ভারতে বাংলাদেশের দূতাবাসের কর্মকর্তাদের অনুরোধ করা হবে। তাদের মাধ্যমে যতটুকু সম্ভব সেখানকার (ভারত) আদালত থেকে তথ্য সংগ্রহ করে নেওয়ার চেষ্টা করবো। সমস্ত সম্পদের তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করে ওই সম্পদের জন্য আমরা পৃথক আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভারতে যেসব মামলা হয়েছে সেগুলোর নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত পিকে হালদারকে দেশে ফেরানো যাবে কিনা তা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। ভারতে তার বিরুদ্ধে বেশকিছু মামলা করেছে। হয়তো আরও করবে। দু’একটি মামলায় তাকে রিমান্ডেও নেওয়া হয়েছে। তবে আমাদের দিক থেকে চেষ্টা থাকবে, যত দ্রুত সম্ভব তাকে ফিরিয়ে আনা। তবে ঠিক কত দিনের মধ্যে তাকে দেশে ফেরত আনতে পারবো, তা বলা কঠিন।
ভারতে তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা হয়েছে। সেগুলোর বিচার শেষ হতে কত দিন লাগবে। অথবা বিচারের আগে ফেরত আনা যাবে কি যাবে না- এসব বিষয় বিবেচনা করে সময়টা নিদিষ্ট করে বলাটা সঠিক হবে না।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পিকে হালদারের সম্পত্তি অর্জন কিংবা মানিলন্ডারিংয়ের নেপন্যে যদি আরও কারও হাত থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দুদক নিশ্চয়ই গড়িমসি করবে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের সে সময়ের অডিট টিমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়েছে। যার সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে, তার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক দুই কর্মকর্তার (এসকে সুর ও শাহ আলম) বিরুদ্ধেও কোনো প্রকার তথ্য পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সাংবাদিকদের তিনি জানান, বিদেশ থেকে অর্থ ফেরত আনার পদ্ধতিটা অনেক জটিল। এক্ষেত্রে দুদকের তেমন সাফল্য নেই- এটাও সত্য। এর আগে বিএনপির প্রয়াত নেতা আরাফাত রহমান কোকোর পাচারকৃত অর্থ দুদক দেশে ফেরত আনতে সক্ষম হয়েছে। তবে পিকে হালদার মানিলন্ডারিং করে যেসব সম্পদ দেশের বাইরে পাচার করেছেন- সেগুলো আমরা দেশে ফেরত আনতে সক্ষম হবো।
ভারপ্রাপ্ত সচিব আরও বলেন, পিকে হালদারের বিষয়ে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ থেকে আমাদের অফিসিয়ালি কিছু জানানো হয়নি। পিকে হালদারের সহযোগী কে কে- এ বিষয়ে যদি ভারতের আদালতে তিনি কোনো লিখিত বক্তব্য দিয়ে থাকে, তাহলে আমরা সেই বক্তব্য সংগ্রহ করবো এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবো।
সূত্র : যুগান্তর